বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদীস- অপচয় ও অপব্যয়
আল-কুরআন
অপচয় না করার নির্দেশ:
یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ
হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর। তোমরা খাও ও পান কর কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।
আল আ’রাফ (আয়াত: ৩১)
অপচয় না করার নির্দেশ:
وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُکُلُهٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ کُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّهٗ یَوۡمَ حَصَادِهٖ ۫ۖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَۙ
আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুর গাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, যায়তুন ও আনার যার কিছু দেখতে একরকম, আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার কর, যখন তা ফলদান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও। আর অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।
আল আন-আম (আয়াত: ১৪১)
অপব্যয় না করার নির্দেশ:
وَ اٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّهٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ وَ لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا.إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورً
আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। আর কোনভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (১৭. সূরা বনী ইসরাঈল ২৬-২৭)
ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন:
وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ کَانَ بَیۡنَ ذٰلِکَ قَوَامًا
আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (২৫. ফুরকান ৬৭)
আল-হাদিস
অজুতে পানি বেশি খরচ করাও অপচয়:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مَرَّ بِسَعْدٍ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ فَقَالَ " مَا هَذَا السَّرَفُ " . فَقَالَ أَفِي الْوُضُوءِ إِسْرَافٌ قَالَ " نَعَمْ وَإِنْ كُنْتَ عَلَى نَهَرٍ جَارٍ " .
হযরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) সা’দ (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সা’দ (রা.) অজু করছিলেন। তাঁর অজুতে পানি বেশি খরচ হচ্ছিল। রাসুল (সা.) তা দেখে বললেন, কেন এই অপচয়? সা’দ (রা.) আরজ করলেন, অজুতেও কি অপচয় হয়? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এমনকি বহমান নদীতে অজু করলেও। (ইবনে মাজাহ ৪২৫)
প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু সংরক্ষণ করা রাসূল স. এর অপছন্দ:
يَقُولُ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ " فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لاِمْرَأَتِهِ وَالثَّالِثُ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, একটি বিছানা পুরুষের, একটি বিছানা তার স্ত্রীর, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য আর চতুর্থটি (যদি প্রয়োজনাতিরিক্ত হয়) শয়তানের জন্য।(মুসলিম, ইসলামি ফাউন্ডেশন ৫২৭৭)
অপব্যয় না করার নির্দেশ:
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُوا وَتَصَدَّقُوا وَالْبَسُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَةٍ
আমর ইবন শুআয়ব (রহ.) তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা গর্ব ও অপব্যয় না করে খাও, দান কর এবং পরিধান কর। (নাসাঈ, ইসলামি ফাউন্ডেশন ২৫৬১)
আল্লাহ তাআলা অপচয় করা পছন্দ করেন না:
عَنِ الشَّعْبِيِّ، حَدَّثَنِي كَاتِبُ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ كَتَبَ مُعَاوِيَةُ إِلَى الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنِ اكْتُبْ، إِلَىَّ بِشَىْءٍ سَمِعْتَهُ مِنَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم. فَكَتَبَ إِلَيْهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ اللَّهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ وَقَالَ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ "
শা’বী (রহ.) থেকে বর্ণিত- মুগীরা ইব্নু শু’বাহ্ (রহ.)-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মু’আবিয়া (রা.) মুগীরা ইব্নু শু’বাহ (রা.)-এর কাছে লিখে পাঠালেন যে, নবী ﷺ এর কাছ হতে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাঁর কাছে লিখলেন, আমি আল্লাহ্র রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- (১) অনর্থক কথাবার্তা, (২) সম্পদ নষ্ট করা বা অপচয় করা এবং (৩) অত্যধিক সওয়াল করা। (সহিহ বুখারী, ১৪৭৭)
অপচয়কারীরা নিকৃষ্ট লোক:
عَنْ أَبيْ أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ سَيَكُوْنُ رِجَالٌ مِنْ أُمَّتِي يَأْكُلُونَ أَلْوَانَ الطَّعَامِ وَيَشْرَبُونَ أَلْوَانَ الشَّرَابِ وَيَلْبَسُونَ أَلْوَانَ اللِّبَاسِ وَيَتَشَدَّقَونَ فِي الْكَلامِ أُولَئِكَ شِرَارُ أُمَّتِي
আবূ উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্য থেকে এমন লোকদের আবির্ভাব ঘটবে ১. যারা খাবে রকমারি খাবার, ২.পান করবে রকমারি পানীয়, ৩.পরিধান করবে রকমারি পোশাক এবং ৪.তারা আবোল-তাবোল বাজে বকবে। এরাই হবে আমার উম্মতের নিকৃষ্টতম লোক। (রকমারি পোশাক,পানীয় দ্বারা উদ্দেশ্য এগুলোর অপচয়,প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার।) [সহীহ আত-তারগীব ২০৮৮]
সম্পদ কোথায় ব্যয় হয়েছে তার জবাব দিতে হবে:
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ " ‘
ক্বিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় তার রবের নিকট হ’তে একটুকুও নড়বে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হ’তে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? আর সে যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী আমল করেছে কি-না’। (তিরমিজি ২৪১৬)
Leave a Comment