রমাদান, সতর্কতা ও শিক্ষা


আমরা রমজানের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। রমজান শেষ হওয়ার সতর্কীকরণ ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। বিদায় নিতে যাচ্ছে রহমত মাগফিরাত নাজাতের এই মহিমাময় রমজান। সূর্য অস্তমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে মাহে রমজান।

রমজানের এই বিদায় যেন আমাদের শেষ বিদায় না হয় সেই হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করি। 

একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  মিম্বরের সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন আমিন। পরের সিঁড়িতেও পা রেখে বললেন, আমিন। আমিন বললেন, তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও। অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিপূর্বে কখনো এরকমটি করেননি।

খুতবার আগে মিম্বারে আরোহনকালে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন তিনবার আমিন বলেছিলেন।

এই আমিন কি বান্দার জন্য কল্যানকর নাকি বিপদের সংবাদ তা সাহাবায়ে কেরাম খুতবার পর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে কাছে এই  আমিন বলার রহস্য কী তা জানতে চান। 

মলিন মুখে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার প্রিয় সাহাবিরা! একটু আগেই জিবরাইল এসেছে আমার কাছে। বড় বেদনার কথা বলে গেল সে। 

সে বলল, হে আল্লাহর নবী! তিন পোড়া কপালের জন্য এখন আমি বদদোয়া করব, প্রতিটি দোয়া শেষে আপনি আমিন বলবেন। 

তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন, আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, জিবরাইল বলল, যে তার পিতামাতা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকেবৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না তার জন্য ধ্বংস। 

আমি বললাম, আমিন। 

দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখি, জিবরাইল বলল, যে আপনার নাম শুনবে কিন্তু দরুদ পড়বে না, তার জন্য ধ্বংস। 

আমি বললাম, আমিন। 

তৃতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখি, জিবরাইল বলল, যে রমজান মাস পাবে কিন্তু নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে জান্নাত উপযোগী মানুষ বানাতে পারবে না, তার জন্যও ধ্বংস। 

আমি বললাম, আমিন।

জিব্রাইল আলাইহি সালামের বদদোয়া আর তার সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমীন বলা, ভাবা যায় কত ভয়ানক বদ দোয়া এটি। 

মাহে রমজান এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত ও ক্ষমা করার এক সুযোগ নিয়ে। এখন আমাদের গুনাহ কতটুকু ক্ষমা হয়েছে এটাই আসল বিষয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে রমজান পেয়েও গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না তার জন্য ধ্বংস। 

রমজান যেভাবে এসেছিল ঠিক সেইভাবে বিদায় হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি রমজানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছি? না কি আগের অবস্থায় রয়েছি।  উত্তর তো আমাদের কাছেই। 

রমজানের রোজা দ্বারা আশা করি আমাদের ভিতরজগৎ কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। 

বর্তমানের করোনার এমন ভয়াবহ অবস্থায় আরও একটি রোজা আমরা পাব কি-না। আমরা তা বলতে পারি না। এমনও হতে পারে আজকের সাহরি ও ইফতার আমার জীবনের জন্য শেষ। 

চিন্তা করে দেখুন গত রমজানে আমাদের পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী ও পরিচিতদের মধ্য থেকে আজ অনেকেই নেই। আমিও আগামী বছরে রমজান পাব কি? আল্লাহর ইবাদাত করার ও গুনাহগুলো মাফ করার  এমন সুবর্ণ সুযোগ আর পাবো কি? যদি পাই তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, অন্যথায় এবারের রমজানেই হবে জীবনের শেষ। 

বাকি সময়টুকু আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদাত ও তাকে পাওয়ার সাধনা করি। জীবনের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। সবার জন্য দোয়া করি। আর বলি, হে আল্লাহ আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন, ভালো রাখুন আমাকেসহ সবাইকে, রোজাসহ সব ইবাদত কবুল করে নিন। আমিন।

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্না।

অর্থ- হে আল্লাহ্‌! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনি পছন্দ করেন। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন।” 

[১৩.০৫.২১ এ আমার নিজ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত ]

No comments

Powered by Blogger.