ঘুমানোর আগে ইসলামি আমল: মনের শান্তি ও শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি
ঘুমানোর আগে সুন্নত অনুসরণ: শান্তি ও বরকতের উৎস
ইসলাম আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে, যাতে আমরা শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি। ঘুমানোর আগে কিছু আমল (ইবাদত) পালন করা সুন্নত, যা আমাদের আত্মাকে প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক। এখানে ইসলামের আলোকে ঘুমানোর আগে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল উল্লেখ করা হলো:
ইসলামের আলোকে ঘুমানোর আগে আমল
১. ওজু করা (Ablution)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
> "যে ব্যক্তি ওজু অবস্থায় ঘুমাতে যায়, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়, যে সারারাত তার জন্য দোয়া করতে থাকে: ‘হে আল্লাহ, তুমি এ বান্দাকে ক্ষমা করে দাও।’"(ইবনু মাজাহ)
ওজু করা শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, এটি মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়।
২. ঘুমানোর আগে নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এই দোয়াটি পড়তেন:
> "বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া"
> অর্থ: "হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মরি ও বাঁচি।" (সহীহ বুখারী)
৩. আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
> "যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, আল্লাহ তাকে সারারাত রক্ষা করবেন এবং শয়তান তার কাছে আসবে না।" (সহীহ বুখারী)
আয়াতুল কুরসি আমাদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।
৪. সূরা বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
> "যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।"(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
এই দুটি আয়াত পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা এবং প্রশান্তি লাভ করা যায়।
৫. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, ও সূরা নাস তিলাওয়াত করা
ঘুমানোর আগে তিনবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, ও সূরা নাস পড়া সুন্নত। এরপর হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মাসহ করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় আমল ছিল। এটি মন্দ এবং শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
৬. সূরা কাফিরুন তিলাওয়াত করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সূরা কাফিরুন তিলাওয়াত করতেন। এটি শিরক থেকে মুক্তির প্রতীক এবং আত্মার জন্য শান্তির উৎস।
> "ঘুমানোর আগে সূরা কাফিরুন পড়লে তা শিরক থেকে মুক্ত থাকার প্রতীক হয়ে থাকে।"(তিরমিজি)
৭. তাসবিহ পাঠ করা (যিকির)
ঘুমানোর আগে এই তাসবিহগুলো পাঠ করা সুন্নত:
- ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’
- ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’
- ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’
> রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটি শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে এবং আত্মিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করে। (সহীহ বুখারী)
৮. তাওবা ও ইসতিগফার করা
দিনশেষে নিজের ভুলত্রুটি ও পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উত্তম। এটি আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক।
৯. ডান কাতে ঘুমানো (Sleeping on the Right Side)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ডান কাতে শোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন:
> "তোমরা ডান কাতে শুয়ে ঘুমাও এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে ঘুমাও।" (সহীহ বুখারী)
ইসলামের আলোকে ঘুমানোর আগে এসব আমল আমাদের দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সহায়ক হয়। প্রতিদিন এই আমলগুলো পালন করলে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি এবং আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমলগুলো যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Comment