সুখ ও শান্তির পথ: ইসলামের চোখে জীবনের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।

কৃতজ্ঞতা ও আত্মতুষ্টি: প্রকৃত সুখের সন্ধান

লেখা: রিয়াজ উদ্দিন  


ইসলামের আলোকে মানুষের জীবনে প্রকৃত সুখ ও শান্তির জন্য কৃতজ্ঞতা, আত্মতুষ্টি এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্‌ তা'আলা কুরআনে অসংখ্যবার বলেছেন, কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে তাঁর দেওয়া নেয়ামতগুলো উপলব্ধি করার কথা। যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তারা আল্লাহ্‌র বরকত লাভ করে; অন্যদিকে যারা নিজের প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে সবসময় আফসোসে ডুবে থাকে, তাদের জীবনে বরকতের অভাব দেখা দেয়। আল্লাহ্‌ বলেন, "যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তোমাদের আরও দান করব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।” (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৭)


কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা নিজের জীবন নিয়ে তৃপ্ত নন এবং সবসময় অন্যের জীবনকেই আনন্দের, সুখের বলে মনে করেন। এই মনোভাব ইসলামের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে, কারণ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা ক্ষণস্থায়ী; প্রকৃত সুখের স্থান পরকালে, যা একজন মুমিন তার নেক আমল দ্বারা অর্জন করতে পারে। আল্লাহ্‌ বলেন, "তোমরা দুনিয়ার জগতের সম্পদ নিয়ে আনন্দে মত্ত আছ, অথচ পরকালই শ্রেয় এবং চিরস্থায়ী।” (সূরা আল-আ'লা, আয়াত ১৬-১৭)

অনেকে আছেন, যারা প্রয়োজন ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম, ফলে তারা ভোগবাদী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ ইসলাম বারবার আমাদের মধ্যপথ অবলম্বনের কথা বলেছে। নবী করিম (সা.) বলেন, “সর্বোত্তম জীবনযাপন হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।” এদের জন্য কুরআনের নির্দেশনা খুবই স্পষ্ট— সূরাহ আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ এথেকে বুঝা যায় আল্লাহ তাআ’লার অসংখ্য নেয়ামত হতে মানুষের জন্য বৈধ বস্তু ভক্ষণ করা যাবে, তবে প্রয়োজনাতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।

আরো একদল মানুষ আছেন, যারা নিজেদের মতামতকেই সর্বোচ্চ সত্য মনে করে অন্যকে সবসময় ভুল সাব্যস্ত করতে চান। তারা হয়তো বাহ্যিক জীবনে সাফল্যের দাবিদার, কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মতৃপ্তি ও অহংকার তাদের অন্তরে প্রবেশ করেছে। ইসলাম অহংকারকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ)

মিথ্যার ব্যাপারেও ইসলাম কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা মিথ্যাকে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা মুমিনের পরিচয় বহন করে না। আল্লাহ্‌ কুরআনে মিথ্যাবাদীদের নিন্দা করেছেন এবং নবী করিম (সা.) বলেছেন, “মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।” (বুখারি ও মুসলিম)

আবার এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের আচরণে অহংকার, ঔদ্ধত্য ও কঠোরতা প্রকাশ পায়। ইসলাম বিনয় ও নম্রতাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে, কারণ বিনয় ও ভালোবাসায় মানুষের অন্তরে শান্তি আসে। আল্লাহ্‌ বলেন, “আল্লাহ্‌ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা নিসা, আয়াত ৩৬)

ইসলাম আমাদের আরও শিক্ষা দেয়, অহংকারী ও মিথ্যাবাদী মানুষদের থেকে দূরে থাকতে এবং নিজের জীবনের শান্তি বজায় রাখতে। জীবনে অমঙ্গল নিয়ে আসা এসব আচরণের প্রতিফল—দুনিয়াতে হতাশা ও পরকালে শাস্তি। তাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের জীবনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং প্রকৃত সুখী হতে হলে আমাদের আল্লাহ্‌র দেওয়া নেয়ামতগুলোকে কৃতজ্ঞচিত্তে গ্রহণ করতে হবে, অহংকার, ঈর্ষা, মিথ্যা ও অত্যাচারের পথ থেকে দূরে থাকতে হবে।


ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত সুখ ও শান্তি অর্জনের জন্য কৃতজ্ঞতা, আত্মতুষ্টি, বিনয় এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং পৃথিবীর ক্ষণস্থায়িত্বের প্রতি সচেতনতা মানুষকে আধ্যাত্মিক শান্তি ও তৃপ্তি এনে দেয়। অহংকার, ঈর্ষা, মিথ্যা ও অতিরিক্ত ভোগবাদের প্রতি আসক্তি মানুষের জীবন থেকে শান্তি কেড়ে নেয় এবং ইসলামের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, একজন মুমিনের উচিত নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, মধ্যপন্থা অবলম্বন করা এবং সত্যের পথে স্থির থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।


No comments

Powered by Blogger.