১৯ অক্টোবর, নতুন বন্ধু দিবস

 ১৯ অক্টোবর, নতুন বন্ধু দিবস

লেখা: রিয়াজ উদ্দিন 

আজ ১৯ অক্টোবর, নতুন বন্ধু দিবস। বন্ধুতা মানব জীবনের এক অনন্য সম্পদ। একজন ভালো বন্ধু জীবনের দুঃসময়ে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায়, আবার খারাপ বন্ধুত্ব ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই বন্ধু নির্বাচন নিয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। 


ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে।

 মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:  

"মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন অনুযায়ী চলে, তাই তোমরা দেখে-শুনে বন্ধু নির্বাচন করো।" (আবু দাউদ, ৪৮৩৩)  

বন্ধুদের উচিত এমন হওয়া, যারা আমাদের আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আগ্রহী করে তোলে, ভুল করলে পরামর্শ দিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে। পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে:  

"সেদিন (কেয়ামতের দিন) জালিমরা আক্ষেপ করবে, বলবে: হায়! যদি অমুককে আমি বন্ধু না বানাতাম!" (সূরা আল-ফুরকান, ২৫:২৮)  

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে প্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সূরা আলে ইমরান : ২)। 

আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সূরা তাওবা : ১১৯)।

আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ভালো এবং দুষ্ট ব্যক্তি মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ও হাঁপরে ফুঁকদাতা (কামার) ব্যক্তির মতো। মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ব্যক্তির অবস্থা তো এমন যে, সে হয়তো এ মিশক তোমাকে উপহার দেবে অথবা তুমি তার থেকে তা খরিদ করবে অথবা তুমি তার থেকে এর সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর হাঁপরে ফুঁকদাতা ব্যক্তি হয়তো সে তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি : ২৬৪১)।

প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, ‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো।’ (সহিহ বুখারি : ২৪৩৯)। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (জামে তিরমিজি : ২৩৪৭)। 

হজরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, তিনটি গুণ যার আছে তাকে বন্ধু বানাতে হবে। 

এক. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী, বিচক্ষণ। 

দুই. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। 

তিন. বন্ধুকে হতে হবে নেককার, পুণ্যবান।




একটি ভালো বন্ধু হতে হলে যা করতে হবে

১. সৎ ও সদাচারী হওয়া – বন্ধুর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং সমর্থন দিতে হবে।  

২. ক্ষমাশীল ও সহনশীল হওয়া – সম্পর্ক বজায় রাখতে ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করতে শিখতে হবে।  

৩. সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা – বন্ধুকে অন্যায়ে সহযোগিতা না করে, তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।  


একবার এক বেদুইন নবি (সা.)কে জিজ্ঞেস করেন, কিয়ামত কবে হবে? নবি (সা.) উত্তরে বলেন, তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলে, (নফল) নামাজ, রোজা, সদকা হিসাবে বেশি কিছু আমার নেই কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। নবি (সা.) বলেন, তাহলে তুমি তার সঙ্গে হবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (সহিহ মুসলিম, ২৬৩৯)।

হজরত আলকামাহ (রহ.) বলেন, ‘বন্ধুত্ব করো তার সঙ্গে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাবগ্রস্ত হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোনো মঙ্গল দেখে, তো গুনে গুনে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে সান্ত্বনা দেয়।’ 

বন্ধুত্ব শুধু আনন্দ আর আড্ডার সম্পর্ক নয়, বরং পারস্পরিক উন্নতি ও সমর্থনের নাম। যারা আমাদের ইহকাল ও পরকালীন কল্যাণের জন্য চিন্তা করে, তারাই প্রকৃত বন্ধু। 

আমরা সবাই এমন বন্ধু হই যারা একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা করি। আমাদের বন্ধুত্ব শুধু দুনিয়াতে নয়, আখিরাতেও যেন আমাদের জন্য শান্তির কারণ হয়।

"যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, কেয়ামতের দিন তাদেরকে আরশের ছায়ায় রাখা হবে।" (সহীহ মুসলিম, ২৫৬৭)



No comments

Powered by Blogger.