উমাইয়া বিন খালাফের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী

story of hadith


মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর প্রেরিত শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন। যদিও মক্কার কুরাইশরা তাঁকে নবী হিসেবে স্বীকার করতো না, তবুও তারা জানতো যে মুহাম্মাদ আল্লাহর নবী (বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০)। তবে তারা নিজেদের অহংকার ও বিদ্বেষের কারণে তাঁকে মানতো না। যদিও তারা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ও কথাকে সত্য বলে জানতো এবং তাঁর অভিশাপকে ভয় করতো। 

এ সম্পর্কেই নিচের হাদীসটি উল্লেখযোগ্য:

সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর এবং উমাইয়া ইবনু খালাফের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। উমাইয়া যখন মদীনায় আসতেন, তখন তিনি সা‘দ ইবনু মু‘আযের অতিথি হতেন, এবং সা‘দ (রাঃ) মক্কায় গেলে উমাইয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করার পর, একবার সা‘দ (রাঃ) ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়িতে অবস্থান করলেন। তিনি উমাইয়াকে বললেন, এমন একটি সময়ের কথা বলো যখন আমি শান্তভাবে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারব। তাই দ্বি-প্রহরের সময় উমাইয়া তাঁকে নিয়ে বের হলেন। 

তাঁদের সাথে আবূ জাহলের দেখা হলে সে (আবূ জাহল উমাইয়াকে লক্ষ্য করে) বলল, হে আবূ সাফ্ওয়ান!তোমার সাথে কে আছে? উমাইয়া বলল, ইনি সা‘দ ইবনু মু‘আয। তখন আবূ জাহল সা‘দ ইবনু মু‘আযকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি নিশ্চিন্তে মক্কায় তাওয়াফ করছ অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের সাহায্য করছ? আল্লাহর কসম! তুমি যদি (এ মুহূর্তে) আবূ সাফওয়ানের (উমাইয়া) সঙ্গে না থাকতে, তবে তোমার নিরাপদে ফিরে যাওয়া সম্ভব হতো না।

সা‘দ (রাঃ) উত্তরে উচ্চস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আমাকে বাঁধা দাও, তবে আমি এমন কিছু করব যা তোমার জন্য আরও কঠিন হবে। আর তা হলো, মদীনার কাছে তোমার (ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) বাণিজ্য পথ বন্ধ করে দেব। তখন উমাইয়া বলল, হে সা‘দ! এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো না। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তারা তোমাকে হত্যা করবে। উমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, মক্কার মধ্যে? সা‘দ (রাঃ) বললেন, তা আমি জানি না। উমাইয়া এতে খুবই ভীত হয়ে পড়ল।

এরপর উমাইয়া তার স্ত্রীকে ডেকে বলল, সা‘দ যা বলেছে, তা তুমি জানো? সে বলল, সা‘দ কী বলেছে? উমাইয়া বলল, সা‘দ বলেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের জানিয়েছেন যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। এরপর উমাইয়া বলল, আমি কখনো মক্কা থেকে বের হব না।

বদর যুদ্ধের দিন যখন ঘনিয়ে এলো, আবূ জাহল সবাইকে একত্রিত হয়ে যুদ্ধের জন্য বের হওয়ার আহ্বান জানালো এবং বলল, "তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসো।" উমাইয়া মক্কা ছাড়তে না চাওয়ায় আবূ জাহল তার কাছে এসে বলল, "হে আবূ ছাফওয়ান! তুমি এই অঞ্চলের নেতা। যদি তুমি পেছনে থাকো, তাহলে অন্যরাও পেছনে থাকবে।" অবশেষে আবূ জাহলের চাপাচাপিতে উমাইয়া রাজি হলো এবং বলল, "তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করেছ, তাই আল্লাহর কসম! আমি মক্কার সেরা একটি উট কিনব।" 

এরপর উমাইয়া তার স্ত্রীকে বলল, "হে উম্মে সাফওয়ান! আমার যাত্রার ব্যবস্থা করো।" তখন তার স্ত্রী তাকে বলল, "হে আবূ সাফওয়ান! তোমার মদীনাবাসী বন্ধুর কথাটি কি তুমি ভুলে গেছ?" উমাইয়া বলল, "না, আমি শুধু কিছুদূর যেতে চাই।" যাত্রা শুরু করার পর প্রতিটি বিরতিতে উমাইয়া তার উট বেঁধে রাখত। এভাবে পুরো পথ অতিক্রম করে অবশেষে বদর প্রান্তরে পৌঁছে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল (মুসলিম হা/৩৬৬৫)।

পরিশেষে বলব, রাসূল (সাঃ)-এর কোন কথাই মিথ্যা হয় না। এই হাদীস তারই প্রমাণ। তাই রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশনা ও সুন্নাত মানা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর পথে জীবন গঠনের তাওফীক দান করুন-আমীন!

 

 

No comments

Powered by Blogger.